অস্কার পুরস্কার বিতরণীর সন্ধ্যায় সেরা অভিনেতা উইল স্মিথ মঞ্চে উঠে সপাটে চড় কষিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের গালে। অস্কারের মঞ্চে উইল স্মিথের চড়। পাশে, ৭৫তম কান চলচ্চিত্রোৎসবের রেড কার্পেটে প্রতিবাদ নারীবাদী সমাজকর্মী-র। ঘটনা দু’টি। দু’টিই প্রতিবাদ। একটি ব্যক্তিগত স্তরের। দ্বিতীয়টি দেশীয় স্তরের।
তবে দু’ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ জানানোর পরিসরও একই রকম। দু’টিই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের তথাকথিত ‘জনপ্রিয়’ মঞ্চ। এক ডাকে গোটা দুনিয়া চেনে এমন— অস্কার আর কান চলচ্চিত্রোৎসব। দু’মাসেরও কম ব্যবধানে আয়োজিত দুই অনুষ্ঠানে এমন পরপর প্রতিবাদের ঘনঘটায় সচকিত দুনিয়া। মাঝে ৫৪ দিন। গত ২৭ মার্চ, অস্কার পুরস্কার বিতরণীর সন্ধ্যায় সেরা অভিনেতা মঞ্চে উঠে সপাটে চড় কষিয়েছিলেন সঞ্চালকের গালে। হলিউডের কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা উইল স্মিথ বলেছিলেন, সঞ্চালক ক্রিস রকস দর্শকাসনে বসা শ্রীমতী স্মিথকে অপদস্থ করেছেন। ওই চপেটাঘাত তার প্রতিবাদ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ছবির দেশ, কবিতার দেশ ফ্রান্সের শহর কান-এ যা ঘটল সেটিও প্রতিবাদ। তবে উইলের মতো তারকা বনাম তারকা বিতর্ক নেই তাতে। কান-এর চোখধাঁধানো লাল গালিচায় পা রেখে নিজের পোশাক ছিঁড়ে ফেলেছেন ১৮ বছরের এক তরুণী। বেরিয়ে এসেছে তাঁর অর্ধনগ্ন শরীর। যাঁর নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাসে আঁকা রক্তের দাগ। ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত। সেখানে ইউক্রেনের হলুদ নীল পতাকার রঙ দিয়ে লেখা, ‘‘আমাদের ধর্ষণ কোরো না।’’
যুদ্ধের আবহেই শুরু হয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র এমনকি, সিনেমাও প্রদর্শিত হচ্ছে কানে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমির জেলেনস্কিও কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনে ছ’মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় যুদ্ধ থামাতে সিনেমার ভূমিকার কথা বলেছেন। তার মধ্যেই শুক্রবারের ঘটনা।
জানা গিয়েছে, কান চলচ্চিত্রোৎসবের লাল কার্পেটে ওই প্রতিবাদী তরুণী প্যারিসেরই বাসিন্দা। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত একটি ‘চরমপন্থী’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। শুক্রবার প্রতিবাদ জানানোর আগে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এক সাংবাদিক। নিজেকে সমাজকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনে সেখানকার মহিলা এবং শিশুদের উপর রুশ সেনাদের শারীরিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কাজ করছেন তাঁরা। বেলজিয়ামে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ বিক্ষোভও দেখিয়েছেন।
প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের জন্য কান-এর মতো পরিচিত মঞ্চ বেছে নেওয়া অপ্রত্যাশিত নয়। অতীতে খেলার মাঠেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কান-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত ব্যক্তিত্বদের যেখানে আনাগোনা, সেখানে কী ভাবে ঢুকে পড়লেন ওই তরুণী? উইল স্মিথ তো অস্কারে আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু এই তরুণী? অসমর্থিত সূত্রের খবর, প্রতিবাদী ওই তরুণী আমন্ত্রণ ‘জোগাড়’ করেছিলেন। তবে তা এখন তদন্তসাপেক্ষ।
তবে এটা ঠিক যে, দুনিয়া জুড়ে সাড়া ফেলেছে নগ্ন প্রতিবাদ। যেমন ফেলেছিল ‘কিং রিচার্ড’- এর বিরাশি সিক্কার চড়। ব্যবধান ৫৪ দিনের। অভিঘাত পৃথিবীজোড়া।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।